গত রবিবার তুমি সকালে মেসেজ দিলে,তোমার ফোন ডিস্টার্ব,তাই আমি যেন ফোন, মেসেজ ,অ্যাপ না করি।খুব কষ্ট হচ্ছিল, কান্না পেয়েছিল।তাই চুপচাপ লাঞ্চ করে ,গান শুনছিলাম মোবাইলে:" তুম না জানে,কিস জাহামে খো গায়া,হাম ভারী দুনিয়ামে তানাহে…
গত রবিবার তুমি সকালে মেসেজ দিলে,তোমার ফোন ডিস্টার্ব,তাই আমি যেন ফোন, মেসেজ ,অ্যাপ না করি।খুব কষ্ট হচ্ছিল, কান্না পেয়েছিল।তাই চুপচাপ লাঞ্চ করে ,গান শুনছিলাম মোবাইলে:
" তুম না জানে,কিস জাহামে খো গায়া,
হাম ভারী দুনিয়ামে তানাহে খো গায়া।......তুম কাহা,তুম কাহা,তুম কাহা.......
গানটা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। অদ্ভুত রহস্যময় সপ্ন দেখছিলাম।তিন চার বার ফোন আসে। অবশেষে ঘুম জড়ানো গলায় বললাম,বলুন ,ম,দাস বলছি".
অপর প্রান্ত থেকে ,একজন বলছে, গেট টা খুলে একবার আসুন আপনার মাস্ক পরে"।
Covid পরিস্থিতি তাই মাস্ক পরে বেরিয়ে দেখি,১ জন মহিলা ও ২ জন পরিচিত ছেলে বললো,স্যার ,কিছু জামা কাপড়,টাকা পয়সা,ব্যাগ, জলের বোতল নিয়ে আসুন,আপনার টেস্ট হবে এক করোনা হসপিটালে"।আমি পাথর হয়ে চুপ চাপ দাড়িয়ে থেকে ঘরে আসলাম।সব জিনিষ গুছিয়ে ওদের সাথে চললাম এক অ্যাম্বুলেন্স এ। গাড়ি চললো কলকাতার দিকে।
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না,কে বললো,আমি করোনা পজিটিভ ও আক্রান্ত?
ভয়ে কাউকে ফোন করিনি।
যেতে যেতে মান্নাদের একটা গান শুনছিলাম," কি বলছেন ডাক্তার,আমি কি আর ভাল হব না...... বড্ড ঘুম পাচ্ছে.......
তোমাকে ভীষণ মিস করছিলাম, কিন্তু তোমাকে তো ফোন করতে পারছিলাম না,কারণ তোমার ফোন খারাপ।বারে বারে,ওই গান টা মনের মধ্যে ডুকরে কাঁদছে," তুম না জানে,কিস যাহামে খো গায়া, তানাহে খো ........
তুমি আমার জীবন থেকে দূরে সরে যেতে চেয়েছিলে।তুমি ভীষণ ভালবাস একাকে। এটাও জানি।
আমার প্রিয় খাদ্য চা,বারে বারে দিয়ে যাচ্ছে।নাকের ভেতর খোঁচা মেরে কি নিল, তা আমার অজানা।ঠিক সময় মোটামুটি খাচ্ছি। অফিস জানে না কেন আমি অফিসে যাই নি।আমার প্রাইভেট স্কুলের ,ছাত্রদের গ্রুপ এ মিথ্যা মেসেজ দিলাম,আমি ৪/ ৫ দিনের জন্য ওড়িশা যাচ্ছি।
প্রতিটি সময়, ঘণ্টা,সকাল ,বিকাল তার পর আসে রাত।যে আমাকে ও সবাইকে ভীষণ যন্ত্রনা দেয়।।
রাত যত দীর্ঘ হয়, ততই আমি আর আমাতে নাই। চোখের সামনে ভেসে ওঠে মৃত্যুর যন্ত্রনা। ভেন্টিলেসন। ডাক্তার, নার্সের অদম্য সাহস ও প্রয়াস।
মনের মধ্যে মান্নাদের গান যেন দূর থেকে বলছে,'" আপনি কি চান শীতের ঝরা পাতার মত,আমার ভালোবাসা মরে যাক, কত দিন থাকবো হাসপাতালের এই বিছানায়
ডক্টর রায় -
আমি কি আর ভালো হব না।
....... আমাকে আপনি বাঁচিয়ে দিন,
আরও কে একটা দিন.....
ডাক্তার রায়........."
আমার ভয় শুধু তোমাকে নিয়ে।তুমি শুধু ভাল থেকো।
পশ্চিমের আকাশটা আজ ভীষণ লাল টকটকে লাগছে। গোধূলির সময়। প্লিজ তুমি আমাকে গোধূলি বেলায় বিদায় দিও না। পূরবীর সুর সারা দুনিয়া জুড়ে।কান ঝালপালা হচ্ছে।আমার ভেতর টা পুড়ে যাচ্ছে। যন্ত্রনায় দম বন্ধ হয়ে আসছে।
কোনো সিম্পটম নাই আমার,তবু ও আমাকে নিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালের বিছানায়।
রাত নেমে আসে। মৃত্যুর হাহাকার শুনেছি বারে বার।আমি কিন্তু চুপ হয়ে গেছি, মৃত্যু যন্ত্রনায়।
তুমি ভালো আছো তো?
আমি জানি না তুমি কেমন আছো। খুব ভালো থেকো তোমার বয় ফ্রেন্ডের সাথে নরম বিছানায়।
সূর্যাস্তের আলো অন্ধ কারে তোমাকে ঠিক দেখতে পাচ্ছি না কেনো?কেন হটাৎ ঝড়ের রাত এলো আজ। কাশ্মীরি কালো চাদর মুড়ি দিয়ে হটাৎ ঝড় নেমেছে।আমার ও হয়তো পূরবীর সুর শুরু হয়ে গেছে তোমার জীবন থেকে। মাঝে মাঝে, হাসপাতালের বিছানায় কান্নার রোল সোনা যায়। ডাক্তার, নার্স,গ্যাস সিলিন্ডার সব ব্যর্থ আজ।
এক ডাক্তার এসে কি সব পরীক্ষা করে গেলেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম," ডাক্তার বাবু, তাহলে আমি কি ভালো হব না.........
মৃদু হেসে বললেন," আপনার কিছু হয় নি, নিশ্চিত থাকুন আপনি"।
রাত গভীর হচ্ছে,আমার চোখে ঘুম নেই। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কি কার ও ঘুম আসে?
কত গান, শৈশব,কৈশোর... জীবনের কত sruggle,মানুষজন, ছাত্র ছাত্রী,কলেজ ও স্কুলের বই লেখা, পুরানো পাণ্ডুলিপি,আর কতগুলো মুখ।
মনে মনে গান করছিলাম মান্নাদের," এসো তুমি হাত বাড়িয়ে,নিয়ে চল সঙ্গে করে, যেখানে সব সর্গ মৃত্যু, পাতায় হারায় রসা তলে,আমি তোমার অবুঝ ছেলে, ফিরে এলাম মায়ের কোলে.......
কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নাই।
হটাৎ বেলা ৮ টা নাগাদ একটা ফোন আসতে,ঘুম ভাঙ্গলো।ও প্রান্ত থেকে তোমার গলা পেয়ে,আমি বেড থেকে বসে পড়ি।তুমি বললে," কোথায় তুমি? আমার ফোনটা সচল ,বলি এতক্ষণ ধরে ঘুমাচ্ছো কেন"।
আমি বললাম,এই একটু দেরি হলো ।
আসলে তোমার মৃত মোবাইলের সাথে ছিলাম এতক্ষণ ধরে।তবে কি আমি ভালো হয়ে গেলাম ,তোমার ভালোবাসায়?
লজ্জায়, ভয়ে তোমাকে আমি বলতে পারিনি ," আমার ক' বার মরণ হবে বলো,যেদিন এসেছো তুমি,মরণ ই তো, সেদিন ই হলো,আমার ক ' বার মরণ হবে বলো........
No comments