যেহেতু খেজুরি বিদেশি বণিক ও নাবিকদের প্রধান বিশ্রাম আর আড্ডার জায়গা হয়ে উঠেছিল, তাই বড় বড় ডাকবাংলো, বন্দর, অফিস, এজেন্ট হাউস, ডাকঘর ইত্যাদির সঙ্গে সেকালের ট্যাভার্ণ ও হোটেলও সেখানে ছিল। কলকাতায় ছিল, শ্রীরামপুরে ছিল, হুগলিতে ছিল, …
যেহেতু খেজুরি বিদেশি বণিক ও নাবিকদের প্রধান বিশ্রাম আর আড্ডার জায়গা হয়ে উঠেছিল, তাই বড় বড় ডাকবাংলো, বন্দর, অফিস, এজেন্ট হাউস, ডাকঘর ইত্যাদির সঙ্গে সেকালের ট্যাভার্ণ ও হোটেলও সেখানে ছিল। কলকাতায় ছিল, শ্রীরামপুরে ছিল, হুগলিতে ছিল, খেজুরিতে ছিল। শুধু বন্দর বা পোতাশ্রয় বলে নয়, বীরকুল, খেজুরি, হিজলী, কাঁথি—এসব অঞ্চল ছিল তখন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের মূল ঘাঁটি। দার্জিলিং, পুরী, গোপালপুর তখনও সাহেবদের স্বাস্থ্যনিবাসকেন্দ্রে পরিণত হয়নি। অনেকে আবার গিয়ে আর ফিরতেন না, খেজুরিতেই দেহ রাখতেন। এরকম কত বিদেশি বণিক, নাবিক, কর্মচারী ও স্বাস্থ্যান্বেষী যে খেজুরিতে সমাধিস্থ হয়ে রয়েছেন তার ঠিক নেই | বছর কয়েক আগেও বিশেষ অনুষ্ঠানে এখানে আসতেন পরিজনরা। মানুষের সেই আনাগোনা এখন অতীত। জঙ্গল, বটগাছে ঢেকে গিয়েছে প্রিয়জনের সমাধি। এমনকী দিন কয়েক আগেই যে অল সোলস ডে পেরিয়ে গেল, সেদিনও মৃত প্রিয়জনদের স্মৃতিচারণ করতে আসেননি কেউই। এমনই অবস্থা খেজুরির শতাব্দী প্রাচীন ইউরোপীয় গোরস্থানের। শতাব্দী প্রাচীন এই গোরস্থানেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন ইংরেজ দুহিতা এমেলিয়া ম্যাক্সওয়েল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে দিনাজপুরের তৎকালীন জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট এডওয়ার্ড ম্যাক্সওয়েল তাঁর স্ত্রী এমেলিয়াকে সঙ্গে নিয়ে খেজুরিতে এসেছিলেন। ১৮২২ সালের ২৬ জুলাই খেজুরিতেই এমেলিয়ার মৃত্যু হয়। ম্যাক্সওয়েলসাহেব স্ত্রীর মৃতদেহ খেজুরির গোরস্থানেই কবর দেন। তাঁর কবরস্থানের সমাধি ফলকে খোদাই রয়েছে, ‘‘হোয়েন সরো উইপস ওভার ভার্চুস স্যাক্রেড ডাস্ট, আওয়ার টিয়ারস বিকাম আস অ্যান্ড আওয়ার গ্রিফ ইজ জাস্ট।” সেই লেখাগুলোতেও জমে গিয়েছে ধুলো। দিন কয়েক আগে কবরস্থানে গিয়ে দেখা গেল, ২১টি সমাধির উপর থেকেই খোওয়া গিয়েছে ফলক। অথচ এই গোরস্থানেই ছিল ভারতের প্রথম ডাকঘর, খেজুরির পোস্টমাস্টার জে বোটেলহো, তাঁর স্ত্রী মেরি ও পুত্র ইউজিন বোটেলহোর সমাধি।
No comments