স্কুল থেকে ফিরেই প্রথম কাজ ছিল, ইউনিফর্মটা কেচে শুকোতে দেওয়া। না শুকোলে তো পরদিন স্কুলে যাওয়া যাবে না। কারণ, ইউনিফর্ম ওই একটাই। একই স্কুলে পড়া জ্যাঠতুতো দিদির ছোট হয়ে যাওয়া ইউনিফর্ম, জুতোও অনেক সময় পড়তে হতো। তিনি হলেন DYFI এর যুব…
স্কুল থেকে ফিরেই প্রথম কাজ ছিল, ইউনিফর্মটা কেচে শুকোতে দেওয়া। না শুকোলে তো পরদিন স্কুলে যাওয়া যাবে না। কারণ, ইউনিফর্ম ওই একটাই। একই স্কুলে পড়া জ্যাঠতুতো দিদির ছোট হয়ে যাওয়া ইউনিফর্ম, জুতোও অনেক সময় পড়তে হতো। তিনি হলেন DYFI এর যুব সভানেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি।
ক্লাস ফাইভ তখন। ঠান্ডায় একটা সোয়েটারের দরকার ছিল মেয়ের। কিন্তু যৌথ পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সুইপার মেট পদে সামান্য বেতনে কাজ করা বাবা বলেছিলেন, এখন টাকা নেই, পরে হবে। তাতে মেয়ের যুক্তি ছিল, ঠান্ডা লেগে শরীর খারাপ হলে তো ওষুধ কিনতে টাকা ধার করতে হবে, তার চেয়ে একটা সোয়েটার কোনও রকমে পাওয়া গেলে ভালো। তিনি হলেন মীনাক্ষী মুখার্জি।
নতুন কেনা বইয়ের গন্ধ কেমন হয়, কলেজ জীবন পর্যন্ত তা জানার সুযোগ ছিল না। সম্বল বলতে লাইব্রেরি থেকে আনা বই এবং দিদির পুরোনো বই। অর্থাভাবে কোনও প্রাইভেট টিউশনের ব্যবস্থাও ছিল না মীনাক্ষী মুখার্জির। এম এ পাশ করার পর কুলটি কলেজের ল্যাব ডিপার্টমেন্টে চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালে সি পি আই এম এর যুব সংগঠন DYFI এর রাজ্য সভানেত্রী নির্বাচিত হলে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। তিনি নন্দীগ্রামে সি পি আই এম এর প্রার্থী মীনাক্ষী মুখার্জি।
নন্দীগ্রামে সি পি আই এম এর প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর মীনাক্ষী মুখার্জির প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, "দল আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা অবশ্যই পালন করব। এবার তৃণমূল বিজেপির সাথে মূল লড়াই লড়বে ছাত্র যুবরা। কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই সরকারই ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও কৃষক বিরোধী।"
প্রথমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তারপর সীতারামপুর হাইস্কুল, সেখান থেকে বি বি কলেজ, সব শেষে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ সালে DYFI এর সাথে যুক্ত হন। ধীরে ধীরে কুলটি আঞ্চলিক কমিটি, বর্ধমান জেলা কমিটি এবং ২০১৮ সালে DYFI এর রাজ্য সভানেত্রী হন। ২০১৮ সালে সি পি আই এম রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১১ ই ফেব্রুয়ারি নবান্ন অভিযানের কর্মসূচিতে তিনি সামনের সারিতে ছিলেন। পুলিশের আঘাতে মইদুল ইসলাম মিদ্দার মৃত্যুর পর আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন মীনাক্ষী মুখার্জি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটি কোচিং সেন্টার খুলেছিলেন মীনাক্ষী মুখার্জি। সেখানে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী পড়তেন নিখরচায়। নিজের অতীত ভোলেননি বলেই মীনাক্ষী মুখার্জি কোচিং সেন্টার খুলেছিলেন। তবে মীনাক্ষী মুখার্জির সাফ কথা, " আমি আমার অতীত দেখিয়ে কারও কাছে কোনও সহানুভূতি চাই না। আমি কমিউনিস্ট পরিবারে বড় হয়েছি। লড়াইটা করতে জানি।"
No comments