Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় জন্মদিনের স্মৃতি তর্পণ! ১৯৫২ এর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন

১৯৫২ এর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন .....

তখন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। দাপুটে বিরোধী নেতা জ্যোতি বসু। বিধানবাবু চৌরঙ্গী থেকে ভোটে লড়তেন এবং জ্যোতিবাবু বরানগর থেকে।নির্বাচনের সপ্তাহ দুয়েক আগে বিধানবাবু চৌরঙ্গীতে জনসভা করবেন…

১৯৫২ এর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন .....

তখন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। দাপুটে বিরোধী নেতা জ্যোতি বসু। বিধানবাবু চৌরঙ্গী থেকে ভোটে লড়তেন এবং জ্যোতিবাবু বরানগর থেকে।নির্বাচনের সপ্তাহ দুয়েক আগে বিধানবাবু চৌরঙ্গীতে জনসভা করবেন। খানিক আগেই জনসভার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছেছেন। গাড়িতেই বিশ্রাম করছেন। হঠাৎই জানলা দিয়ে দেখেন জ্যোতিবাবু আর কয়েকজনের সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছেন কলেজ স্ট্রিটের দিকে। উস্কো-খুস্কো উদ্ভ্রান্ত চেহারা। বিধানবাবু তড়িঘড়ি নিজের আপ্তসহায়ককে দিয়ে ডাকতে পাঠান জ্যোতিবাবুকে। জ্যোতিবাবু আসতেই প্রথম প্রশ্ন, "চেহারাটা দেখেছো নিজের? তা যাচ্ছ কোথায়?" জ্যোতিবাবু বললেন, "আপনারাই তো ট্রামের ভাড়া বাড়িয়েছেন। আজ মিছিল আছে তার প্রতিবাদে। সেখানেই যাচ্ছি।" বিধানবাবু সবটা শুনে মুচকি হাসলেন তারপর সস্নেহে বললেন, "আচ্ছা তা যাবে খন। কিন্তু জ্যোতি খালি পেটে থেকে শরীর খারাপ করে বিধান রায় আর কংগ্রেসকে হারানো যাবে না যে। গাড়িতে উঠে এসো। খানকয়েক লুচি আছে। দুজন মিলে খাই। তারপর তুমি যাও গিয়ে বিধান রায়কে গালাগাল করো।" এরপর আর কিভাবে অগ্রজকে না বলেন জ্যোতিবাবু। গাড়িতে উঠলেন। তড়িঘড়ি খেয়ে জনসভায় ভাষণ দিতে নামলেন বিধানবাবু আর তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত মিছিলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন জ্যোতিবাবু।

ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় ছিলেন জ্যোতি বাবুর বাবার বন্ধু। একদিন বিধানসভার মধ্যেই জ্যোতি বাবুর আসনের কাছে হেঁটে এসে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি নিশিকান্ত বসুর ছেলে?

১৯৪৮ সালে পার্টি বেআইনি ঘোষিত হলে তার কিছুদিন পরে জ্যোতি বসুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ১৯৫০ সালের শেষদিকে জেল থেকে ছাড়া পান জ্যোতি বসু। কিন্তু ছাড়া পাওয়ার পরেও পুলিশের লোক আর গাড়ি সবসময় জ্যোতি বসুকে অনুসরণ করতো। তখন জ্যোতি বসুর নিজস্ব গাড়ি ছিল না। বাজারে যাও, সিনেমায় যাও, সব জায়গায় পিছনে পুলিশ। আর সহ্য না করতে পেরে জ্যোতি বাবু একদিন বাড়ির পিছন দিকে জ্যাঠামশাইয়ের বাড়ির পাঁচিল ডিঙ্গিয়ে ট্যাক্সি করে সোজা রাইটার্স বিল্ডিং এ গিয়ে বিধান চন্দ্র রায়ের সাথে দেখা করলেন। বললেন, আমরা যে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছি সে তো আদালতের জন্য, হেবিয়াস কর্পাসে। আপনারা তো দয়া করে ছাড়েননি। তাহলে এখনও কেন পুলিশ আমার পিছনে ঘুরবে? ডাঃ রায় পুলিশের আই জি কে ডাকলেন। আই জি বললেন, এরা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে। তাই নজর না রেখে উপায় নেই। এই কথা শুনে জ্যোতি বাবু দারুণ ক্ষেপে গিয়ে বললেন, পরের বার পুলিশের গাড়ি দেখলে আমি কিন্তু সত্যি সন্ত্রাস করবো -- ইট ছুঁড়বো। যাই হোক বিধান চন্দ্র রায়ের হস্তক্ষেপে তারপরে পুলিশের গাড়ির পিছু নেওয়া বন্ধ হয়েছিল।

একদিন আলোচনার মাঝে জ্যোতি বাবুর উদ্দেশ্যে বিধান চন্দ্র রায় বলে উঠলেন, "তোমাদের পার্টির ওই কাগজটা আমাদের সম্বন্ধে যা তা লিখছে, তুমি এটা বন্ধ করো।" জ্যোতি বাবু অবাক হয়ে বললেন, "কোন কাগজের কথা বলছেন?" বিধান বাবু বললেন, ওই যে কি যেন নাম,  ব্লিৎস। জ্যোতি বাবু  যতই বলেন ব্লিৎসের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির কোনও সম্পর্ক নেই, কিন্তু বিধান বাবু বিশ্বাস করেন নি।"

১৯৫৭ সালের ভোটে সি পি আই প্রার্থী মহম্মদ ইসমাইল প্রায় হারিয়ে দিচ্ছিলেন বিধান বাবুকে। একজন ট্রাম শ্রমিকের কাছে হারতে হারতে জিতলেন এটা প্রভাব ফেলেছিল বিধান চন্দ্র রায়ের মনে। সেটা তিনি অনেককে বলেছিলেন এমনকি জন কেনেডি কেও। ওনার ভয় ছিল কলকাতার জন্য কিছু না করতে পারলে কলকাতা পুরোপুরি কমিউনিস্ট হয়ে যাবে। উনি সেটাই ফোর্ড ফাউন্ডেশনের কর্তাব্যক্তিদের বোঝালেন এবং ক্যালকাটা মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং অরগানাইজেশন তৈরি করলেন। ওই প্রসঙ্গেই কেনেডিকে বললেন, দেখেছো না, আর একটু হলে একটা ট্রামের কন্ডাক্টর আমাকে প্রায় হারিয়ে দিচ্ছিল! উনি সেই কথা জ্যোতি বাবুকে বলাতে, জ্যোতি বাবু জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি কেন এই কথা বললেন?" বিধানবাবু বললেন, এইসব না বললে, তোমাদের ভয় না দেখালে ওরা টাকা দেবে নাকি? বিধান বাবু নেহরুকেও এইসব বলতেন।"

কেরালা সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের বিশৃঙ্খলা নিয়ে একদিন জ্যোতি বসুকে বললেন, তোমাদের ওই নাম্বুদিরিপাদকে দিয়ে কিছু হবে না। জ্যোতি বসু কারন জিজ্ঞেস করায় বললেন, "ওকে বলো কয়েকশো কংগ্রেসিকে গ্রেপ্তার করে জেলে আটকে রাখতে, দুদিনে সব মিটে যাবে। জনমত নাম্বুদিরিপাদ সরকারের পক্ষে না বিপক্ষে তা উপনির্বাচনে প্রমাণিত হবে, ওই সব আন্দোলন করে নয়।"

একবার এক মহিলা কংগ্রেস মন্ত্রী অনুযোগ করে বিধান বাবুকে বলেছিলেন, "জ্যোতিবাবু যা বলেন আপনি করে দেন কিন্তু আমরা বললে কিছু করেন না।"  বিধান বাবু উত্তরে বলেন, "জ্যোতি তো নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আসে না, কিন্তু তোমরা আসো নিজেদের স্বার্থে।"

একবার জ্যোতি বাবুর হাতে ব্যাথা। ডাঃ নারায়ন রায় দেখে বললেন, হয়তো গোদ হয়েছে। উনি ব্যান্ডেজ লাগালেন। পরে রক্ত নেবেন বললেন। পরদিন বিধান বাবু দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হাতে ব্যান্ডেজ কেন? জ্যোতি বাবু বললেন, আপনার ছাত্র ডাঃ নারায়ন রায় লাগিয়েছেন। উনি সন্দেহ করেছেন গোদ হয়েছে। বিধান বাবু বললেন, নারায়ন জানলো কি করে? আমার মনে হয় না। তারপরই ডাঃ নারায়ন রায়কে ফোন করে বললেন, জ্যোতি এসেছে। তুমি কি করে বললে ওর গোদ! তারপরেই খানিকটা আলোচনার পর বললেন, তুমি ওর রক্ত নিতে হয় নাও, পরীক্ষা করে দেখো। কিন্তু আমার মনে হয় না তুমি যা ভাবছো সেটা হয়েছে। তারপর জ্যোতি বাবুকে একটা টোটকা লিখে দিয়ে বললেন, এটা যে কোনও মুদির দোকানে পাবে, মাখলেই সেরে যাবে। পরে রক্তপরীক্ষায় দেখা গেল গোদ হয়নি।

১৯৫৯ সালের খাদ্য আন্দোলনের সময় একবার জ্যোতি বসুর পরিচয় দিয়ে কেউ একজন ফোন করেছিল বিধান বাবুকে। বিধান বাবু নিজেই সেই কথা জ্যোতি বাবুকে বলেছিলেন, "বুঝলে, কয়েকদিন আগে একজন আমাকে ফোন করে বললো, আমি জ্যোতি বসু, কথা বলতে চাই। আমি কিন্তু গলার স্বর শুনে বুঝেছি তুমি নও।"

ব্যাক্তিগত স্তরে বাংলার এই দুই বিরাট ব্যক্তিত্বের সম্পর্কে কোনও তিক্ততা বা সংকীর্ণতা ছিল না। কিন্তু রাজনৈতিক বৈরিতার অভাব ছিল না। কংগ্রেসী অপশাসনের বিরুদ্ধে নানা আন্দোলনে জ্যোতি বসুর ধারালো, শ্লেষাত্মক নানা মন্তব্য শোনা যেত। অন্যদিকে জ্যোতিবাবু বারবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ওই বিধান বাবুর পুলিশের হাতেই। কিন্তু রাজনীতি তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারেনি।

জ্যোতি বাবু প্রতিদান দিয়েছিলেন। বিধান চন্দ্র রায়ের স্বপ্ন সল্টলেকের নাম বিধাননগর করে।

ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জন্ম ও প্রয়াণদিবস একই দিনে। ১ লা জুলাই।

No comments